হোমিওপ্যাথি হচ্ছে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান উদ্ভাবিত একটি বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি যার মূলনীতি হচ্ছে যে সকল দ্রব্য কোন সুস্থ্য শরীরে প্রয়োগ করলে ( বা সেবন করলে) যে সব রোগ লক্ষণ সৃষ্টি হয়, সেই সব রোগ লক্ষণ কোন রোগীতে থাকলে উক্ত রোগসৃষ্টিকারী দ্রব্য শক্তিকৃত করে সূক্ষ্ম মাত্রায় প্রয়োগ করলে (বা সেবন করলে) সেই রোগ দূরীভূত হয়।
উদাহরণঃ কয়েক ফোটা পেয়াজের রস ঘ্রাণ নিয়ে বা সেবন করে কারও সর্দি, হাঁচি, চোখ জ্বালা ও চোখ দিয়ে পানি ঝরা লক্ষণ দেখা দিল। এখন অন্য একজন রোগীর যদি সর্দি লেগে হাঁচি, চোখ জ্বালা ও চোখ দিয়ে পানি ঝরা লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে উক্ত পেয়াজের রস শক্তিকৃত করে সূক্ষ্ম মাত্রায় সেবন করলে সেই রোগীর সর্দি দূরীভূত হবে। এটিই হোমিওপ্যাথি এবং এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
অধিকাংশ রোগই হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে সকল রোগই হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। যে সকল রোগের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে করা সম্ভব তা হলঃ
১. ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক সংক্রমণজনিত সকল রোগ হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করা যায়। তবে মারাত্মক সংক্রমণজনিত কিছূ রোগ যেমন- যক্ষা, এইচ.আই.ভি, গনোরিয়াজনিত মেনিনজাইটিস, টাইফয়েড ইত্যাদি হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা না করে এলোপ্যাথিতে চিকিৎসা করলে দ্রুত ভাল ফল পাওয়া যায়।
২. বিভিন্ন ধরণের সবিরাম রোগ যা কিছুদিন পর পর দেখা দেয় সেখানে হোমিওপ্যাথি ঔষধ বেশ কার্যকরী।
৩. যে সকল রোগে দেহের ক্রিয়াগত পরিবর্তন ঘটে () সেগুলি খূব দ্রুত হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু যে সকল রোগে দেহের গঠণগত পরিবর্তন ঘটে () সেকল রোগ হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করতে অনেক সময় লাগে।
৪. কোন কোন রোগ প্রথম অবস্থায় হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করা যায়, কিন্তু শেষ স্তরে যখন তা দ্রুত বিস্তার লাভ করে তখন তা নিরাময় করা যায় না।
৫. রোগের শিকড় যত গভীরে থাকবে ততই তা নিরাময় করতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
১. যে সকল রোগের ক্ষেত্রে অস্ত্রাপচারের প্রয়োজন সেখানে হোমিওপ্যাথি প্রযোজ্য নয়। যেমন-মারাত্মক এপেন্ডিসাইটিস, নাড়ী জড়ানো, হাড় ভাঙা, মারাত্মক দূর্ঘটনা। তবে এক্ষেত্রে সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে হোমিওপ্যাথি ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. যে সকল ক্ষেত্রে নিশ্চিত ও আশু উপশমের প্রয়োজন সেখানে হোমিওপ্যাথি প্রযোজ্য নয়।
৩. জীবনঘাতি কোন রোগে/অবস্থায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেখানে হোমিওপ্যাথি প্রযোজ্য নয়। যেমন- মারাত্মক বিষক্রিয়া, আত্মহত্যার চেষ্টা, প্রচুর রক্তক্ষরণ।
৪. অপুষ্টি বা খাদ্য ঘাটতিজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কোন ফল দেয় না।
৫. যেক্ষেত্রে রোগের উত্তেজক কারণ দূর করা হয় না সেখানে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কোন ফল দেয় না।
১. খালি পেটে ঔষধ সেবন করবেন। ঔষধ সেবনের আগে ১ ঘণ্টার মধ্যে ও সেবনের পরে আধা
ঘন্টার মধ্যে কিছু খাবেন না।
২. আপনার সহ্য হয় এমন পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাদ্য খাবেন।
৩. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় সময় আহার করবেন ও নিদ্রায় যাবেন।
৪. দৈনিক কমপক্ষে ৬ ঘন্টা ঘুমাবেন।
৫. দৈনিক প্রচুর শীতল পানি পান করবেন (৪ থেকে ৫ লিটার)।
৬. নির্দোষ বিনোদন ও খেলাধুলায় অংশ নিতে পারেন।
৭. প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় কমপক্ষে ১ ঘন্টা খোলা বাতাসে হাঁটবেন। সাধ্যমত শারীরিক
পরিশ্রম করবেন।
৮. সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবেন ও মনকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করবেন।
৯. মন থেকে সকল প্রকার কুচিন্তা বাদ দিয়ে ধর্মীয় জীবন-যাপনের চেষ্টা করবেন।
১. ঔষধ সেবনের আগে ১ ঘণ্টার মধ্যে ও সেবনের পরে আধা ঘন্টার মধ্যে কিছু খাবেন না।
২. ঔষধ খাওয়ার পরে ১ ঘণ্টার মধ্যে কোন প্রকার কষ্টকর শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম
করবেন না।
৩. কোন প্রকার সুগন্ধি দ্রব্য, দাঁতের মাজন বা পেষ্ট ব্যবহার করবেন না।
১। একিউট বা অচির বা তরুন রোগ
২। ক্রণিক বা চির বা পুরাতন রোগ
তরুন রোগঃ যে সমস্ত রোগ হঠাৎ উপস্থিত হয়, দ্রুত জীবনীশক্তির পরিবর্তন সাধন করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই হয় রোগীর জীবন নাশ করে- না হয় সমূলে নিজেই (রোগ) দূরীভূত হয় তাকে তরুন রোগ বলে।
এই সকল রোগের কোন স্থিতিশীলতা নেই। এই রোগের ভোগকাল নির্দিষ্ট, এই নির্দিষ্ট সময়ের
মধ্যেই রোগের বিকাশ ও পরিণতি ঘটে (নিরাময় অথবা মৃত্যু)।
ঔষধ ছাড়াও তরুন রোগ আরোগ্য হয়, তবে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে।
তরুন রোগের ভোগকাল অল্পদিন অর্থাৎ ২/১ দিন হতে সর্বোচ্চ ২/১ মাস পর্যন্ত হতে পারে।
তরুন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবশ্যই বর্তমান বিদ্যমান লক্ষণ ও তার কারণের আলোকে
ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে এবং যে কারণে রোগটি হয়েছে তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রধানত: মানসিক ও শারীরিক অনিয়মের ফলে বা স্বাস্থ্যবিধি লংঘনের ফলে এই জাতীয় রোগ
ব্যক্তিগতভাবে যে কোন মানুষকে আক্রমণ করতে পারে।
উদাহরণঃ সর্দি, জ্বর, উদরাময়, কলেরা, হাম, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, গলক্ষত,
বমি, এলার্জি, কাশি, কানে বেদনা, আধকপালে মাথাব্যথা, আঘাত, দংশন, বিষক্রিয়া, কেটে
যাওয়া, থেতলে যাওয়া ইত্যাদি।
এছাড়া যে সকল ক্রণিক বা পুরাতন রোগ বৃদ্ধি পেয়ে প্রবল যন্ত্রণা সৃষ্টি করে সেই
রোগেও নতুন বা তরুন রোগের মত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
যেমন: পুরাতন আমাশয় প্রবল আকার ধারণ করলে, হাঁপানীর টান বৃদ্ধি পেলে। আর যে সকল
রোগ তরুণ রোগের মত দেখা দেয়; কিন্তু চিকিৎসা করলে সাময়িক উপশম হয়ে কিছুদিন পরে
আবার ফিরে আসে সেই সকল রোগের চিকিৎসা ক্রণিক বা পুরাতন রোগের মত গ্রহণ করতে হবে।
চিররোগঃ যে সমস্ত রোগের শুরুটা প্রায়ই জানা যায় না, ধীরে ধীরে সামান্য শক্তিতে, অগোচরে আরম্ভ হয়ে বহুদিন ধরে জীবনীশক্তির বিকৃতি ঘটায় এবং দেহকে এরূপ অন্ত:সারশূণ্য করে ফেলে যে প্রকৃত ঔষধ ব্যতীত জীবনীশক্তির নিজস্ব প্রচেষ্টায় এর হাত থেকে পরিত্রাণ পায় না তাকে চিররোগ বলে।
চিররোগ ধীরে ধীরে জীবনীশক্তিকে নষ্ট করতে থাকে এবং ঔষধ ছাড়া কখনও নিরাময় হয় না।
চিররোগের কারণ অদৃশ্য, সহজে খুজে পাওয়া যায় না।
রোগের ভোগকালের কোন সময়সীমা নেই। রোগী আজীবন চিররোগে ভুগতে পারে। এই রোগ ধীরে ধীরে
বৃদ্ধি পেয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটায়।
হ্যানিম্যানের মতে, এই সকল রোগ উৎপত্তির মূল কারণ সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস, টিউবারকুলেসিস
নামক রোগবীজ বা মায়াজম।
বিভিন্ন ধরণের চিররোগের উদাহরণঃ
১। হৃদপিন্ডের পীড়া, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র, একজিমা, এলারজি, বমিভাব, মাথাব্যথা,
পেশির আক্ষেপ।
২। সিফিলিস, বধিরতা, তোৎলামী, লিভারের সমস্যা, অস্থিক্ষত, গলক্ষত, মুখে ঘা, পাকস্থলীতে
ঘা, হাঁপানী, হিপাটাইটিস, ল্যারিনজাইটিস, দ্রুত হৃদস্পন্দন, ওভারীর সমস্যা, ক্ষুধামান্দ্য,
পুরাতন ডায়রিয়া, কার্বাঙ্কল, ক্যানসার, মৃগী, পক্ষাঘাত, খর্বাকৃতি, ধবল বা শ্বেতী।
৩। হিস্টিরিয়া, হাঁপানী, মূত্রনালীর সংকীর্ণতা, মূত্রপাথুরী, একশিরা, ফাইলেরিয়া,
ডিপথেরিয়া, বসন্ত, যোনিকপাট বন্ধ, সন্ন্যাস, পেশী বাত, গেটে বাত, সায়েটিকা, টাইফয়েড,
টিউমার, ছানি, বাধক, ক্রণিক আমাশয়, হার্পিস, ধ্বজভঙ্গ, স্মরণশক্তি হ্রাস, বাচালতা,
বমিভাব, মাথাব্যথা, সর্দি ঝরা, নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।
৪। ক্যান্সার, স্ট্রোক, হুপিং কাশি, মেদপ্রবণতা, বিভিন্ন ধরণের টিউমার, পুরাতন
কাশি।
৫। সন্ন্যাস, কিডনী অকেজো, সোরাইসিস, অতি ক্ষুধা, ওজনহীনতা, কালা।
৬। শিশুদের কানের সংক্রমণ, পিঠে ব্যথা, ঘাড় আড়ষ্টতা, হাত-পায়ে আড়ষ্টতা।
১. সুষম খাদ্য (শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ ও পানি)
গ্রহণ করতে হবে।
২. কোলেষ্টরেলপূর্ণ খাদ্য (চর্বি, মাংস, মাখন, ডিমের কুসুম, মাছের ডিম, জীবজন্তুর
মাথা, যকৃত, গলদা ও বাগদা চিংড়ী, নারকেল, ডালডা) বর্জন করতে হবে।
৩. অধিক ক্যালরীযুক্ত খাদ্য (চিনি, মিষ্টি, চকলেট) বর্জন করতে হবে।
৪. সালাদ, সুপ, শাক-সবজি, শস্যজাত খাদ্য, ফলমূল, মাখন তোলা দুধ থেকে তৈরী
খাদ্য, ডাল, ছোট মাছ, পাখির মাংস, চিকেন বেশি করে খেতে হবে।
৫. গোল আলু, লাল চাল, লাল আটা, পেপে, কমলা, স্ট্রবেরী, টমেটো খেতে হবে।
৬. সপ্তাহে অন্তত: ৫ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করবেন। দ্রুত হাঁটা
একটি ভাল ব্যায়াম।
৭. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় আহার করবেন ও নিদ্রায় যাবেন।
৮. দৈনিক কমপক্ষে ৬ ঘন্টা ঘুমাবেন।
৯. সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবেন
ও মনকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করবেন।
১০. মন থেকে সকল প্রকার কুচিন্তা বাদ দিয়ে ধর্মীয় জীবন-যাপনের চেষ্টা করবেন।
তরুন বা একিউট রোগের ক্ষেত্রে সঠিক মাত্রার সঠিক ঔষধ দ্রুত
রোগ সারায়। কিন্তু ক্রণিক বা পুরাতন রোগের ক্ষেত্রে রোগ সারতে বিলম্ব হয়।
এখন দেখা যাক তরুন বা পুরাতন রোগ সারতে কেন বিলম্ব হয়:
তরুন রোগ সারতে বিলম্বের কারণ (রোগী ও চিকিৎসকের ত্রুটি)
-
১. সঠিক ঔষধ প্রয়োগ না করা বা নিম্নমানের ঔষধ প্রয়োগ করা।
২. সঠিক মাত্রায় ঔষধ ব্যবহার না করা।
৩. রোগ উৎপত্তির উত্তেজক কারণ দূর না করা। যেমন: সর্দির চিকিৎসা করার সময় ক্রমাগত
ঠান্ডা লাগানো, আমাশয় চিকিৎসা করার সময় ক্রমাগত গুরুপাক ভোজন।
৪. তরুন রোগ পুরাতন আকার ধারণ করা, এর জন্য প্রয়োজন ছিল ধাতুগত চিকিৎসা।
৫. রোগ নিরাময়ের জন্য পথ্য ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে সতর্ক না হওয়া।
পুরাতন রোগ সারতে বিলম্বের কারণ (রোগী ও চিকিৎসকের ত্রুটি না থাকলেও) -বর্তমানে কেবল বাংলাদেশের রোগীদের জন্য এই সাইটে অনলাইন চিকিৎসার
ব্যবস্থা আছে। ভিসা কার্ড বা মাস্টার কার্ড সেট আপ করার পর সারা বিশ্বের রোগীদের
জন্য এই সাইটে অনলাইন চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
সাবমিট করার পর আপনাকে নির্ধারিত ফি বিক্যাশের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। এর পর ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে বিক্যাশের TrxID সাবমিট করে প্রেসক্রিপশনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ফি পরিশোধের ২/১ ঘন্টার মধ্যে * আপনার জন্য প্রেসক্রিপশন পাঠানো হবে। যে কোন সময় আপনার মোবাইল নং ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে আপনার প্রেসক্রিপশন দেখতে পারেবেন।
খালি পেটে ঔষধ সেবন করবেন। ঔষধ সেবনের আগে ১ ঘণ্টার মধ্যে ও সেবনের পরে আধা ঘন্টার মধ্যে কিছু খাবেন না। প্রেসক্রিপশনে ঔষধ সেবনের যাবতীয় নির্দেশনা দেয়া থাকবে।